জাতীয় নির্বাচনের ১১৮ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা জয়ের পথে তেমন বাধা নেই। এর অধিকাংশ আসনে দলটির কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় এবং ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা পিছিয়ে থাকায় সরকারি দলের প্রার্থীরা আছেন বেশ ফুরফুরে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার কাছ থেকে পাওয়া আসনভিত্তিক পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন সরকারি দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন। এ ছাড়া সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্য বিশ্লেষণেও পাওয়া গেছে এমন আভাস।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলের ১১৮ প্রার্থীর বিজয় প্রায় নিশ্চিত। এসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন। এ কারণে এসব আসনে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা নেই বললেই চলে। এ সুযোগে অনেক প্রার্থী পাশের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ১১৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অনেকেই নিজেদের পছন্দের স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ কেউ নিকটাত্মীয়। নির্বাচনী এলাকায় এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো অবস্থান নেই। এমনকি নির্বাচনী এলাকায় তাদের পোস্টারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আসনগুলোতে নৌকার বাইরে অন্য কোনো প্রতীকের পোস্টার খুব একটা চোখে পড়ছে না।
আওয়ামী লীগের নিরাপদ আসনের মধ্যে রয়েছে– পঞ্চগড়-২, ঠাকুরগাঁও-১, দিনাজপুর-২, দিনাজপুর-৬, নীলফামারী-১, রংপুর-৪, রংপুর-৬, জয়পুরহাট-১, জয়পুরহাট-২, বগুড়া-৫, বগুড়া-৭, রাজশাহী-৩, রাজশাহী-৪, নাটোর-২, সিরাজগঞ্জ-১, সিরাজগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৪, সিরাজগঞ্জ-৬, পাবনা-২, পাবনা-৪, পাবনা-৫, যশোর-২, যশোর-৪, মাগুরা-১, মাগুরা-২, নড়াইল-১, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, বাগেরহাট-২, বাগেরহাট-৪, খুলনা-১, খুলনা-২, খুলনা-৩, খুলনা-৬, সাতক্ষীরা-৩, বরগুনা-২, পটুয়াখালী-২, ভোলা-১, ভোলা-২, ভোলা-৩, ভোলা-৪, বরিশাল-১, বরিশাল-৫, ঝালকাঠি-১, ঝালকাঠি-২, টাঙ্গাইল-১, টাঙ্গাইল-৬, টাঙ্গাইল-৭, জামালপুর-১, জামালপুর-৩, শেরপুর-২, নেত্রকোনা-১, নেত্রকোনা-৪, নেত্রকোনা-৫, কিশোরগঞ্জ-৪, কিশোরগঞ্জ-৬, মানিকগঞ্জ-৩, মুন্সীগঞ্জ-২, ঢাকা-৩, ঢাকা-৬, ঢাকা-৭, ঢাকা-৮, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১১, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১৭, গাজীপুর-৪, নরসিংদী-২, নরসিংদী-৫, নারায়ণগঞ্জ-২, নারায়ণগঞ্জ-৪, গোপালগঞ্জ-২, গোপালগঞ্জ-৩, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, শরীয়তপুর-১, শরীয়তপুর-৩, সুনামগঞ্জ-৩, সুনামগঞ্জ-৫, সিলেট-১, সিলেট-৪, মৌলভীবাজার-১, মৌলভীবাজার-৩, মৌলভীবাজার-৪, হবিগঞ্জ-২, হবিগঞ্জ-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, কুমিল্লা-৩, কুমিল্লা-৮, কুমিল্লা-৯, কুমিল্লা-১০, কুমিল্লা-১১, চাঁদপুর-১, চাঁদপুর-২, ফেনী-১, ফেনী-২, নোয়াখালী-১, নোয়াখালী-৫, নোয়াখালী-৬, চট্টগ্রাম-৪, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৭, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১১, চট্টগ্রাম-১৩, চট্টগ্রাম-১৪, কক্সবাজার-২, কক্সবাজার-৩, কক্সবাজার-৪, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান।
রংপুর বিভাগ
রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন এমপির বিরুদ্ধে পঞ্চগড়-২ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় তিনি সহজেই জয় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও-১ আসনেও অভিন্ন ছবি। দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্র সেন সহজ জয় পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। দিনাজপুর-২ আসনে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রয়েছেন বেশ এগিয়ে। দিনাজপুর-৬ আসনের বর্তমান এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি আজিজুল হক চৌধুরী। সেখানে এগিয়ে আছেন শিবলী সাদিক।
আফতাব উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে নীলফামারী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলের জেলার শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য ইমরান কবির চৌধুরী। এখানে আফতাব উদ্দিন সরকারের অবস্থান বেশ মজবুত। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় রংপুর-৪ আসনে নিরাপদ অবস্থানে আছেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি টিপু মুনশি। রংপুর-৬ আসনে একেবারে ঝুঁকিহীন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম।
রাজশাহী বিভাগ
জয়পুরহাট-১ আসনে সামছুল আলম দুদুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দু’জন– জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আবদুল আজিজ মোল্লা ও সদর উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম। এই তিন প্রার্থীর মধ্যে সামছুল আলম এগিয়ে। জয়পুরহাট-২ আসনে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্কেলপুরের সাবেক পৌর মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তিনি বগুড়া-৫ আসনে সহজ জয় পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বগুড়া-৭ আসনে জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নুর বিরুদ্ধেও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ রাজশাহী-৩ আসনে সহজ জয় পেতে পারেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
রাজশাহী-৪ আসনে তাহেরপুরের পৌর মেয়র অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি প্রকৌশলী এনামুল হক। এখানে অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এগিয়ে। নাটোর-২ আসনে শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার। এই আসনে এগিয়ে শিমুল।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় বেশ নির্ভার। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে দলের জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধেও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তাই তিনি সহজ পেতে পারেন। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে সহজ জয়ের সম্ভাবনা সাবেক এমপি শফিকুল ইসলামের। সাবেক এমপি চয়ন ইসলামের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদপুরের সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু। এখানে চয়ন ইসলাম এগিয়ে।
পাবনা-২ আসনে আহমেদ ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে লড়ছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল আজিজ খান ও বিএনএমের (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন) সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির এগিয়ে। পাবনা-৪ আসনে গালিবুর রহমান শরীফের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি পানজাব বিশ্বাস। পাবনা-৫ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় তাঁর অবস্থান বেশ শক্ত।
খুলনা বিভাগ
যশোর-২ আসনে দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের জামাতা ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিনের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের চৌগাছা শাখার সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমান সমর্থন করায় ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিনের জয়ের সম্ভাবনা বেড়েছে। যশোর-৪ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি রণজিৎ রায় নিষ্ক্রিয় থাকায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এনামুল হক বাবুল।
ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে মাগুরা-১ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তিনিও জয় পেতে পারেন। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় মাগুরা-২ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার এমপির জয়ের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। একই কারণে নড়াইল-১ আসনে বর্তমান এমপি বি এম কবিরুল হক মুক্তির বিজয় প্রায় নিশ্চিত। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় নড়াইল-২ আসনে ক্রিকেট তারকা ও বর্তমান এমপি মাশরাফী বিন মুর্তজাও জয় পেতে যাচ্ছেন।
বাগেরহাট-১ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও বর্তমান এমপি শেখ হেলাল উদ্দীন এমপির বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তিনি বেশ এগিয়ে আছেন। বাগেরহাট-২ আসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৌত্র ও বর্তমান এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম আজমল হোসেন থাকলেও তিনি এগিয়ে রয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগও বাগেরহাট-৪ আসনে বেশ নির্ভার। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জামিল হোসাইন।
সাবেক এমপি ননী গোপাল মণ্ডলের বিরুদ্ধে খুলনা-১ আসনে সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায় দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। খুলনা-২ আসনে বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে ও বর্তমান এমপি শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাইদুর রহমান। এই আসনেও এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে খুলনা-৩ আসনে ফাতেমা জামান সাথী দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। খুলনা-৬ আসনে দলের উপজেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি রশীদুজ্জামান এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী জি এম মাহবুবুল আলম। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় সাতক্ষীরা-৩ আসনে বর্তমান এমপি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এগিয়ে রয়েছেন।
বরিশাল বিভাগ
বরগুনা-২ আসনে সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান এমপি সুলতানা নাদিরা, পটুয়াখালী-২ আসনে আ স ম ফিরোজ এমপি, ভোলা-১ আসনে দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি এবং ভোলা-২ আসনে বর্তমান এমপি আলী আজম মুকুলের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। তাদের বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
ভোলা-৩ আসনে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপির বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন। এ আসনে শাওনের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। ভোলা-৪ আসনে এগিয়ে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। বরিশাল-১ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় সহজ জয় পেতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপির বিরুদ্ধে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহ উদ্দিন রিপন। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে। ঝালকাঠি-১ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তমের। ঝালকাঠি-২ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি জয়ের পথে রয়েছেন।
ঢাকা বিভাগ
টাঙ্গাইল-১ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি আনোয়ারুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়ের সম্ভাবনা বেশি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির। টাঙ্গাইল-৬ আসনে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলার শাখার সহসভাপতি তারেক শামস খান হিমু। টাঙ্গাইল-৭ আসনে বর্তমান এমপি খান আহমেদ শুভর বিরুদ্ধে মির্জাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী। এই আসনে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় সহজ জয় পেতে যাচ্ছেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন এমপি এবং মানিকগঞ্জ-৩ আসনে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন এমপির। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা তাহমিনা। সেখানে এমিলি এগিয়ে।
ঢাকা-৩ আসনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপির বিরুদ্ধে আলী রেজা দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও নৌকার জয়ের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। ঢাকা-৬ আসনে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বেশ এগিয়ে রয়েছেন। ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে সোলায়মান সেলিমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় ঢাকা-৮ আসনে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-৯ আসনে সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, ঢাকা-১০ আসনে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা-১১ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন, ঢাকা-১২ আসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, ঢাকা-১৩ আসনে কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৫ আসনে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপির সহজ জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকা-১৬ আসনে সালাউদ্দিন রবিন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও এগিয়ে আছেন পল্লবী থানা শাখার সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এমপি। ঢাকা-১৭ আসনেও এগিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
গাজীপুর-৪ আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এমপির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাঁর ফুপাতো ভাই আলম আহমেদ। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
নরসিংদী-২ আসনে সহজ জয় পেতে পারেন ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ এমপি। নরসিংদী-৫ আসনে রায়পুরা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও এখন পর্যন্ত এগিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু এমপি। স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এ কে এম শামীম ওসমান এমপি এগিয়ে রয়েছেন। গোপালগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল হাসান শাহীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও জয়ের সম্ভাবনা বর্তমান এমপি ও দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি বেশ এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মাদারীপুর-১ আসনে চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন ও মাদারীপুর-২ আসনে দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপির। শরীয়তপুর-১ আসনে ইকবাল হোসেন অপু এমপি এবং শরীয়তপুর-৩ আসনে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক এমপি সহজ জয় পেতে পারেন। এই দুই এমপির বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
ময়মনসিংহ বিভাগ
জামালপুর-১ আসনে দলের বকশীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি নুর মোহাম্মদ, জামালপুর-৩ আসনে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি এবং শেরপুর-২ আসনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী এমপি জয়ের পথে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। নেত্রকোনা-১ আসনে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি মোশতাক আহমেদ রুহী। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি জালাল উদ্দিন তালুকদারের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় নেত্রকোনা-৪ আসনে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক সচিব ও বর্তমান এমপি সাজ্জাদুল হাসান।
নেত্রকোনা-৫ আসনের বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের ভাই অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও এগিয়ে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
সিলেট বিভাগ
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে তৃণমূল বিএনপির নেতা ও সাবেক এমপি শাহীনুর পাশা চৌধুরী প্রার্থী হলেও এখন পর্যন্ত খুব একটা ঝুঁকিতে পড়েননি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে বর্তমান এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে আছেন।
দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় নির্ভার সিলেট-১ আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, সিলেট-৪ আসনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি, মৌলভীবাজার-১ আসনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি, মৌলভীবাজার-৩ আসনে জিল্লুর রহমান এবং মৌলভীবাজার-৪ আসনে বর্তমান এমপি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ খান দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও হবিগঞ্জ-২ আসনে এগিয়ে আছেন দলের জেলা শাখার আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল। হবিগঞ্জ-৩ আসনে এগিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির এমপি।
চট্টগ্রাম বিভাগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম এমপি এগিয়ে রয়েছেন। এসব আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। কুমিল্লা-৩ আসনে ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী উত্তর জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার।
দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় এগিয়ে রয়েছেন কুমিল্লা-৮ আসনে আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন শামীম, কুমিল্লা-৯ আসনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি ও কুমিল্লা-১০ আসনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি। কুমিল্লা-১১ আসনে মুজিবুল হক এমপির বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রামের সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে মুজিবুল হক এগিয়ে রয়েছেন। চাঁদপুর-১ আসনে দলের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদের বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় তিনি ঝুঁকিতে নেই।
চাঁদপুর-২ আসনে দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ইসফাত আহসান। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে আছেন। ফেনী-১ আসনে নির্ভার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। ফেনী-২ আসনে অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল করিম ফারুক দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী।
নোয়াখালী-১ আসনে এইচ এম ইব্রাহিম এমপি, নোয়াখালী-৫ আসনে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এবং নোয়াখালী-৬ আসনে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি। এসব আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। চট্টগ্রাম-৪ আসনে মোহাম্মদ ইমরান দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও এগিয়ে আছেন উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এস এম আল মামুন। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় নির্ভার চট্টগ্রাম-৬ আসনে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম-৭ আসনে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি এবং চট্টগ্রাম-৯ আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি।
চট্টগ্রাম-১১ আসনে জিয়াউল হক সুমন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বর্তমান এমপি আবদুল লতিফ এগিয়ে। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় চট্টগ্রাম-১৩ আসনে এগিয়ে আছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপির জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এখানে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী চন্দনাইশ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী। কক্সবাজার-২ আসনে এগিয়ে বর্তমান এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। কক্সবাজার-৩ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ থাকলেও সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বেশ নির্ভার। কক্সবাজার-৪ আসনে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী এমপির বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা শাখার সভাপতি নুরুল বশর। এখানে এগিয়ে রয়েছেন বদিপত্নী।
এ ছাড়া খাগড়াছড়িতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, রাঙামাটিতে দীপংকর তালুকদার এমপি ও বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপির জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
পাঠকের মতামত